,

বন্যা কবলিত রৌয়াইল গ্রাম পরিদর্শনে এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া

স্টাফ রিপোর্টার \ হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলার প্রায় ৪২ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে গুঙ্গিঁয়াজুরী হাওর অবস্থিত। এ হাওরের ওপর দিয়ে দুটি নদী ও অনেক খাল-বিল বয়ে গেছে। বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ হাওর এলাকা তিন থেকে দশ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। হাওরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত করাঙ্গী ও বীজনা নদীতে শুকনো মৌসুমে পানি অনেক কমে যায়। খাল-বিল শুকিয়ে যায়। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ইরি বোরো চাষাবাদ করতে হয় কৃষকদের। ফলে এক ফসলের ওপর নির্ভর করেন এখানকার কৃষকেরা। ওই ফসলও অনেক সময় আগাম বন্যায় ডুবে যায়। এ বছর এমনটাই হয়েছে। এপ্রিলেই বন্যা হয়েছে। বন্যায় গুঙ্গিঁয়াজুরীর রৌয়াইল ও বাঘদাইর হতাশার ছায়া নেমে আসে। ঘরের চুলায় নেই আগুন। এক বেলা খেয়ে দু-বেলা অনাহারে থাকতে হচ্ছে। যদিও এখানে স্বাস্থ্যসেবার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে এখানের শিশুরা যাতে শিক্ষা বঞ্চিত না হয় এজন্য ২৩ শতক জমির ওপর ১৯৭৩ সালে রৌয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা শতাধিক। শিক্ষক সংখ্যা তিনজন। এ স্কুলের সবদিক পানিতে থৈ থৈ করছে। নৌকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। এ অবস্থা দেখলে মনে হবে তারা যেন জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে পাঠশালায় এসে শিক্ষা গ্রহণ করছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, আগাম বন্যায় হাওরে পানি এসেছে। নিয়ে গেছে কৃষকের ফসল। তাদের ঘরে নেই পর্যাপ্ত খাবার। এ অবস্থায়ও প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা নৌকা চালিয়ে স্কুলে আসছে। নানা সময়ে তারা নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে আহতও হয়। তারপরও তারা পাঠ গ্রহণে অতি আগ্রহী। রেজাল্টও ভালো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলেছে, বন্যায় নিয়ে গেছে আমাদের জমির ফসল। পরিবারের চরম হতাশা। খেয়ে, না খেয়ে প্রতিদিন নৌকা করে আমরা স্কুলে এসে লেখাপড়া করছি। এ স্কুলটির ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে নেই পর্যাপ্ত আসবাবপত্র। শত সমস্যার মধ্যেও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত স্কুলে আসছে। যদিও ২০১৪ সালের শেষের দিকে রৌয়াইল এলাকার বাসিন্দা শ্রীকান্ত সরকার হবিগঞ্জ-সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর কাছে স্কুলের সার্বিক অবস্থার সাথে গ্রামের বেকার সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। এতে নিজ চোখে দেখে এমপি কেয়া চৌধুরী স্কুলের, শ্মশানঘাট ও রাস্তার উন্নয়নসহ স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা করে দেন। এদিকে এবার টানা বৃষ্টিতে আগাম বন্যার পানি প্রবেশ করে গুঙ্গিঁয়াজুরীর রৌয়াইল ও বাঘদাইর হাওরের কৃষকের স্বপ্ন পানির নিচে গেছে তলিয়ে গেছে। এ সংবাদ পেয়ে এমপি কেয়া চৌধুরী রৌয়াইল গ্রামে পরিদর্শন করতে যান। এ সময় কৃষকরা জানান, তাদের জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পচা ধান কেটে গো-খাদ্যে হিসেবে তারা ব্যবহার করছেন। কৃষক এখন সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। এসব শুনে বিষয়টি তিনি বিষয়টি কৃষিমন্ত্রীর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবগত করেছেন। এছাড়া তিনি কৃষকদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন। এমপি কেয়া চৌধুরী’র মুখে এ কথা শুনে কৃষকদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে গুঙ্গিঁয়াজুরীর রৌয়াইল, বাঘদাইর ও অন্যান্য হাওরে কৃষকের স্বপ্নের আশার আলো বোরো ধান পানির নিচে রয়েছে। আমি তাদের পাশে আছি। ইতিপূর্বেও রৌয়াইলে নারীদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ রাস্তা, শ্মশানঘাট ও স্কুলের উন্নয়নে বরাদ্দ দিয়েছিলাম। এখনও তাদের দুর্ভোগ লাঘবে জননেত্রী শেখ হাসিনা’র কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে আসব।


     এই বিভাগের আরো খবর